বিট্রিশ আমলের বিভাগীয় শহর রাজশাহী। তৎকালীন থেকে বিভাগীয় শহরের প্রশাসন যন্ত্রের পীটস্থল হল রাজশাহী কোর্ট। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সব সময় প্রাধান্য পেয়েছে শহরের প্রাণকেন্দ্রে। তাই প্রথম থেকে রাজশাহী মহানগরীর পশ্চিম অঞ্চল রাজশাহী কোর্ট অবহেলিত থেকে গেছে। অনেকবার অত্র অঞ্চলের বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি অনুধাবন করেছে এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বার-বার সেই ঐকান্তিক প্রচেষ্টা রণভঙ্গ ব্যর্থতায় পর্যবর্ষিত হয়েছে। সেই ব্যর্থতার কারণ গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল জায়গা জমি। সর্বশেষ সব ব্যর্থতা শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে ১৯৭২ সালে তৎকালীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় ত্রাণ ও পূর্ণবাসন মন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান-এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অত্র অঞ্চলের বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিদের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে পি.টি.আই ভবনে পরবর্তীতে কোর্ট একাডেমিতে স্থানান্তরিত নৈশ মহাবিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যেটি আজ রাজশাহী কোর্ট কলেজ নামে সারা রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সময় অত্র কলেজের সম্পাদক ছিলেন মরহুম জনাব ডা: মজিবর রহমান। ডিমেতালে কলেজটির চলতে-চলতে আবারও হোচট খেতে হয় ১৯৭৫ সালে। সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও অত্র অঞ্চলের বিদ্যোৎসাহী সুধিজনেরা যেমন প্রফেসর মরহুম সাইদুর রহমান। সুপারেনটেন্ড জনাব আব্দুস সামাদ, পি.টি.আই রাজশাহী, অধ্যাপক দাউদ আলী ও ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল বারী প্রমুখ ব্যক্তিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৮৪ সালে রাজশাহী নৈশ কলেজ হিসেবে বর্তমান স্থানে পুন: প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেই নৈশ্য কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন অব: বিভাগীয় কমিশনার জনাব জয়নাল আবেদীন এবং সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় এ কিউ এম বজলুল হক। জয়নাল আবেদীন দায়িত্ব থেকে অব্যাহত পাওয়ার পর আবার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আব্দুস সামাদ এবং রাজশাহী নৈশ কলেজ হিসেবে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পাঠদান স্বীকৃতি লাভ করে।
ছোট পরিসর কলেজটি চালু হলেও প্রথম থেকে অত্র অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। পরবর্তীতে অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন বাবু অনিল কুমার সাহা। ১৯৮৬ সালে কলেজটি নৈশ মহাবিদ্যালয় নাম পরিবর্তন করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনেরন ০২ নং ওয়ার্ডে বর্তমান স্থানে রাজশাহী কোর্ট কলেজ নামে যাত্রা শুরু করে। কলেজটি ০১/০১/১৯৮৬ সাল থেকে এম.পি.ও ভুক্তি হয়। বাবু অনিল কুমার অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যথাক্রমে প্রফেসর মোহাম্মদ আলী ও মোঃ শফিকুর রহমান। পরবর্তীতে স্থায়ী অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মোঃ আব্দুর রাজ্জাককে। তিনি কয়েকবছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব থেকে সরে গেলে সেই মুহূর্তে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন প্রফেসর মোঃ ফজলুল হক ও মোঃ শফিকুর রহমান।
প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে যে সমস্ত বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গ কলেজটি নিয়ে যা স্বপ্ন দেখেছিলেন, আজ তা বাস্তবে রূপলাভ করেছে। পশ্চিম অঞ্চলের একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০০০ সালে ২৭ শে নভেম্বর মোঃ শফিকুর রহমান অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। বর্তমান অধ্যক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কলেজটি ২০০৯ সালে সিটি কর্পোরেশনের অধিভুক্তি হয় এবং প্রতিষ্ঠানটি সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সহায়তায় ক্যাম্পাসে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মিত হয়।
২০১৬ সালের ৮ই নভেম্বর বর্তমান অধ্যক্ষ এ.কে.এম কামরুজ্জামান অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৬ সালে বর্তমান সভাপতি এবং রাজশাহী সদর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব ফজলে হোসেন বাদশা এর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় প্রতিষ্ঠানের পাঁচ (৫) তলা ভবন নির্মিত হয়। ১৯৯৫ সালে অত্র প্রতিষ্ঠানে ডিগ্রী কোর্স চালু হয়।
ডিগ্রী কোর্সগুলো হলো- ১। বি.এ, ২। বি.এস.এস, ৩। বি.বি.এস এবং ২০১১ সাল থেকে অনার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে ১২টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। অনার্স কোর্সগুলো হলো-১। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ২। সমাজবিজ্ঞান, ৩। বাংলা, ৪। অর্থনীতি, ৫। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ৬। ইতিহাস, ৭। দর্শন, ৮। ব্যবস্থাপনা, ৯। হিসাববিজ্ঞান, ১০। ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা, ১১। প্রাণিবিদ্যা, ১২। উদ্ভিদবিজ্ঞান